ফুটবল যখন জীবন ছুঁয়ে যায়: অকালপ্রয়াণের বিষাদ
সম্প্রতি একটি সার্জারির কারণে আমি লেখালেখি থেকে কিছুটা দূরে ছিলাম। শারীরিক ও মানসিকভাবে কিছুটা দুর্বল থাকায় নিয়মিত লেখা সম্ভব হয়নি। কিন্তু ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গে এমন একটি খবরে চোখ পড়লো যা আমাকে গভীরভাবে নাড়া দিয়ে গেল, এবং এই কথাগুলো লিখতে বাধ্য করল।
বৃহস্পতিবার সকালে আমি জানতে পারি লিভারপুল ও উলভসের প্রাক্তন তারকা দিয়োগো জোটা এবং তার ভাই আন্দ্রের আকস্মিক মৃত্যুর খবর। প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারিনি। দিয়োগো জোটা একজন অসাধারণ ফরোয়ার্ড, আর সবাই জানে আর্সেনালের এমন খেলোয়াড়ের দরকার। আমার মনে হলো বুঝি কোন ট্রান্সফার নিউজ, কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই বাস্তবতা পরিষ্কার হলো; একটা মর্মান্তিক ঘটনা।
খেলোয়াড়েরা, বিশেষ করে যারা অল্প বয়সে অনেক কিছু অর্জন করে, তাদের আমরা কখনো কখনো মানুষের দৃষ্টিতে দেখি না। দিয়োগো আর আন্দ্রে মাত্র জীবন চলার এক তৃতীয়াংশ পেরিয়ে এসেছিলেন। এমন সময়ে আমরা বুঝতে পারি, ফুটবলারেরও পরিবার আছে, ভালোবাসার মানুষ আছে, সন্তান আছে।
এমন সময়ে কিছু বলাও অর্থহীন মনে হয়, কিন্তু মানুষ হিসেবে আমরা শোক প্রকাশ করি। লিভারপুল ম্যানেজার আর্নে স্লটের দেয়া শ্রদ্ধাঞ্জলি ছিল হৃদয়ছোঁয়া। যারা ওদের সবচেয়ে কাছের, তারা যে কী ভয়াবহ দুঃখের মধ্যে আছেন তা ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব। আমরা কেবল তাদের জন্য ভালোবাসা আর শক্তি কামনা করতে পারি।
জনপ্রিয় মানুষের মৃত্যু সবসময় আমাকে ভাবায়; কেন এমন মানুষদের হারিয়ে আমরা এতটা ভেঙে পড়ি, যদিও কখনো তাদের সাথে দেখা হয়নি? আজ লিভারপুল, উলভস, পোর্তো-এর লক্ষ লক্ষ সমর্থক শোকাহত। ওদের বেশিরভাগই হয়তো কখনো দিয়োগো বা আন্দ্রের সাথে দেখা করেনি, তবু এই শূন্যতা গভীরভাবে অনুভূত হচ্ছে।
অসংখ্য মানুষ জীবনের কোনো এক পর্যায়ে ফুটবল ভালোবেসে ফেলেছে, প্রায় নিজের অজান্তেই। এবং ফুটবল আমাদের জীবনের এতটাই গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়ায় যে, এটার জন্য আমরা কাঁদি, হইচই করি, আবার আনন্দে আত্মহারা হই।
দিয়োগো জোটা লিভারপুলের হয়ে তার শেষ গোলটা করেছিলেন মার্সিসাইড ডার্বিতে, একটা জয়ী গোল, যেটা তাদের লিগ জয়ের পথে এগিয়ে দিয়েছিল। এমন গোলের গুরুত্ব কেবল পরিসংখ্যানে নয়, স্মৃতির গহীনে গাঁথা হয়ে থাকে। উলভস সমর্থকদের জন্য জোটা সম্ভবত ফুটবল ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে।
যখন আমরা আমাদের ফুটবল তারকাদের হারাই,; বিশেষ করে অকালে এমন দুঃখজনক পরিস্থিতিতে, সেই ক্ষতি আমাদের গভীরভাবে ছুঁয়ে যায়। ফুটবল আমাদের জীবনে রঙ, আনন্দ আর অর্থ এনে দেয়। আমরা হয়তো এই মানুষগুলোর সাথে ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত না, তবুও তাদের মাধ্যমে আমরা বাঁচি, ভালোবাসি, আর স্মৃতি তৈরি করি।
চিরশান্তিতে থাকো, দিয়োগো আর আন্দ্রে। তোমরা আমাদের জীবনে যতটা গুরুত্বের ছিলেন, তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।